যশোরের বাঘারপাড়ার চেচুয়াখোলা গ্রামে পুলিশ স্বামীর কাছ থেকে তালাকের খবর পেয়ে প্রিয়া খাতুন (১৯) নামে এক কলেজছাত্রী আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্বামী কর্তৃক মোবাইলফোনে তালাকের খবর এবং তালাকনামা হাতে পৌঁছার পর গতরাতে ওই কলেজছাত্রী নিজ ঘরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে তার পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছেন। নিহতের মামা পুলিশ কনস্টেবল বিপ্লব হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। প্রিয়ার স্বামী রাকিব হাসান পুলিশের এএসআই পদে ঢাকায় রাজারবাগ পুলিশ হেড কোয়ার্টারে কর্মরত আছেন। গতকাল সোমবার বেলা ১২টার দিকে তার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। প্রিয়ার মামা পুলিশ কনস্টেবল বিপ্লব হোসেন জানান, বাঘারপাড়া উপজেলার সাইটখালী গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে রাকিব হাসানের সঙ্গে একই উপজেলার চেচুয়াখোলা গ্রামের ইদ্রিস আলীর মেয়ে প্রিয়ার ২০১৫ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারি প্রেম পরবর্তী বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই শ্বশুরবাড়ির লোকজন তার ওপর মানসিক নির্যাতন করতেন। এক পর্যায়ে রাকিবও স্ত্রীর ওপর নির্যাতন শুরু করে। মাস ছয় আগে প্রিয়ার পরিবারের লোকজন বিষয়টি নিষ্পত্তির লক্ষ্যে রাকিবদের বাড়িতে যান। রাকিবের বাড়ির লোকজন তাদের অপমান করে প্রিয়াকে তাদের সঙ্গে পাঠিয়ে দেন। তখন থেকেই প্রিয়া বাবার বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। বিপ্লব জানান, চলতি বছর প্রিয়া যশোর সরকারি মহিলা কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে (অনার্স) প্রথমবর্ষে ভর্তি হন। তিনি অভিযোগ করেন, রোববার বিকাল তিনটার দিকে রাকিব ফোন করেন প্রিয়াকে। ওই সময় তাকে তালাক দেয়া হয়েছে এবং তালাকনামা আজকালের মধ্যে তার হাতে পৌঁছাবে জানালে প্রিয়া মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন। সন্ধ্যার পর প্রিয়ার হাতে পৌঁছায় স্বামী দারোগা রাকিব হোসেনের পাঠানো তালাকনামা। বিষয়টি গোপন রাখে প্রিয়া। এর পরপরই বাড়ির সবার অগোচরে ঘরের আড়ার সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে প্রিয়া। এ বিষয়ে জানতে এএসআই রাকিব হাসানের সঙ্গে ফোনে কয়েক দফা যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে রাকিবের বাবা আব্দুর রাজ্জাকের ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনিও ফোন রিসিভ করেননি। সে কারণে তাদের কোনো বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। গতকাল সোমবার তালাকের কপি হাতে পান প্রিয়ার পরিবারের সদস্যরা। তালাকনামায় রাকিব জানান, ‘মনের অমিল, বনিবনা না হওয়া, আমার অবাধ্য হওয়া’ ইত্যাদি কারণ দেখিয়ে ২রা জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে ঢাকার বিজয়নগর কাজী অফিস থেকে একটি তালাকের নোটিশ পাঠানো হয়েছে। এএসআই রাকিব হাসান ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইন টেলিকমে কর্মরত রয়েছেন বলে জানান প্রিয়ার মামা। তিনি বলেন, প্রিয়ার আত্মহত্যার খবরটি জানালে ছেলের বাবা বলেছেন, ‘আমরা অসুস্থ, আপনারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েন।’ এ বিষয়ে কথা হয় বাঘারপাড়া থানার এসআই তরুণ কুমার করের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সুরতহাল রিপোর্ট তৈরিকালে জেনেছি, মেয়েটির সঙ্গে রাকিবের প্রেমসম্পর্কের একপর্যায়ে অভিভাবকদের মাধ্যমে বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই মেয়েটি পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছেন। বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হলে এ বিষয়ে একটি তদন্ত হয়। যা মেয়েটির অনুকূলে যায়নি। তারপর থেকেই প্রিয়া বাবার বাড়ি থাকতেন।’ তিনি জানান, সমপ্রতি গোপনে রাকিব আরেকটি বিয়ে করেছেন বলে শোনা গেছে। রোববার দুপুরে রাকিব তাকে ফোন করে তালাকের বিষয়টি জানালে ক্ষোভে-অপমানে তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.