মৃত্যুবার্ষিকীতে স্মরণ
ঢাকাই ছবির দাপুটে অভিনেতা খলিল। সেসঙ্গে অভিনয়ের আলো ছড়িয়েছেন টিভি ও মঞ্চনাটকেও। ২০১৪ সালের আজকের দিনে পৃথিবীর মায়া ছেড়ে পরপারে পাড়ি জমান সদা হাস্যোজ্জ্বল গুণী এ মানুষটি। আজ তার দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। গুণী এই মানুষটির জন্য তার পরিবার এবং শিল্পী সমিতি বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। শিল্পী সমিতির সহসভাপতি ওমর সানী বলেন, খলিল ভাই আমাদের চলচ্চিত্রের অভিভাবক ছিলেন। তার মৃত্যুতে আমরা দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি, সত্যিকারের একজন ভালো মনের মানুষ, একজন অভিভাবককে হারিয়েছি। তার প্রয়াণে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে সেটা আসলেই পূরণ হওয়ার নয়। তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে আজ বাদ আসর বিএফডিসির মসজিদে মিলাদ মাহফিল ও দোয়া হবে। সবাইকে এতে অংশগ্রহণের জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। এদিকে খলিলের দ্বিতীয় ছেলে মুসা খান জানান, আজ বাদ জোহর তার কবরস্থানে পরিবার এবং মহল্লাবাসীর পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। বাদ মাগরিব খলিলের নূরজাহান রোডের বাসায় মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া আগামী ৯ই ডিসেম্বর শুক্রবার ‘শৈশব মেলা বাংলাদেশ’র আয়োজনে মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বাদ জুমা কাঙালিভোজের আয়োজন করা হয়েছে। ‘শৈশব মেলা বাংলাদেশ’র প্রতিষ্ঠাতা গোলাম কিবরিয়া অপু। এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন খলিল। জীবনের শেষ সময়ে এসে তিনি এর উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন। ৮শ’রও বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন খলিল। তবে একটিমাত্র চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য বহু বছর আগে একবারই পেয়েছিলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। চিত্রনায়িকা কবরী প্রযোজিত ও আলমগীর কুমকুম পরিচালিত এ ছবিটির নাম ‘গুণ্ডা’। এ ছবিতে তার সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন নায়করাজ রাজ্জাক, আলমগীর ও কবরীসহ আরও অনেকে। আর চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১২ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন। খলিল অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র কলিম শরাফী ও জহির রায়হান পরিচালিত ‘সোনার কাজল’। নায়ক হিসেবে খলিল অভিনয় করেছেন ‘কাজল’, ‘প্রীত না জানে রীত’, ‘জংলী ফুল’, ‘বেগানা’সহ আরও কয়েকটি চলচ্চিত্রে। এস এম পারভেজ পরিচালিত ‘বেগানা’ চলচ্চিত্রে প্রথম খলনায়ক হিসেবে খলিল অভিনয় করেন। চলচ্চিত্র পরিচালনা না করলেও দুটি চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছিলেন তিনি। একটি ‘সিপাহী’ অন্যটি ‘এই ঘর এই সংসার’। খলিলের জন্ম ১৯৩৪ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি সিলেটে। মঞ্চ দিয়েই তার অভিনয় জীবন শুরু হয়। ‘প্রীত না জানে রীত’ ছবির নায়ক হওয়ার মাধ্যমে রূপালী পর্দায় অভিষেক হয় তার। চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে তিনি শবনমের সঙ্গে জুটিবদ্ধ হয়ে সবচেয়ে বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য ছবি হলো ‘সঙ্গম’, ‘পুনম কি রাত’, ‘অশান্ত ঢেউ’, ‘ক্যায়সে কাহু’, ‘ভাওয়াল সন্ন্যাসী’, ‘উলঝান’, ‘সমাপ্তি’, ‘তানসেন’, ‘আলোর মিছিল’, ‘নদের চাঁদ’, সোনার কাজল’, ‘অলংকার’, ‘মাটির ঘর’, ‘পাগলা রাজা’, ‘মিন্টু আমার নাম’, ‘বেঈমান’, ‘আগুন’, ‘ফকির মজনু শাহ’, ‘কন্যা বদল’, ‘যৌতুক’, ‘ঘাতক’, ‘আওয়াজ’, ‘নবাব’, ‘সোনার চেয়ে দামি’, ‘বদলা’, ‘মেঘের পর মেঘ’, ‘আয়না’, ‘মধুমতি’, ‘ওয়াদা’, ‘ভাই ভাই‘, ‘বিনি সুতোর মালা’, ‘মাটির পুতুল’, ‘সুখে থাকো’, ‘অভিযান’, ‘পুনর্মিলন’, ‘কার বউ’, ‘বউ কথা কও’, ‘দিদার’, ‘দ্বীপকন্যা’, ‘সুখের ঘরে দুঃখের আগুন’, ‘এই ঘর এই সংসার’, ‘বাপ বড় না শ্বশুর বড়’ ইত্যাদি। তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতিও ছিলেন। চলচ্চিত্রের পাশাপাশি খলিল টিভি নাটকেও অভিনয় করেছেন। তার অভিনীত বিশেষ নাটকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আবদুল্লাহ আল মামুনের ধারাবাহিক নাটক ‘সংশপ্তক’। এ নাটকটি বিটিভিতে প্রচার হয়। ‘সংশপ্তক’-এর মিয়া চরিত্রে অভিনয় করে তিনি ব্যাপক আলোড়ন তোলেন। ‘মিয়ার বেটা মিয়া’ হিসেবে তার পরিচিতি ছড়িয়ে পড়ে ছোট পর্দার দর্শকদের মুখে মুখে। অভিনয়ে পুরোদস্তুর ব্যস্ত হওয়ার আগে বাংলাদেশ আনসারের কর্মকর্তা ছিলেন খলিল।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.