এখন পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ডনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে ১৭ লাখ বেশি ভোটে এগিয়ে আছেন হিলারি ক্লিনটন। এত বিপুল সংখ্যক পপুলার ভোটে তিনি এগিয়ে থাকলেও জটিল ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটের মারপ্যাঁচে হেরে গেছেন হিলারি। এখানেই মর্মবেদনা ডেমোক্রেটদের। লন্ডনের অনলাইন ইন্ডিপেন্ডেন্টের খবরে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের চেয়ে হিলারি ১৭ লাখের বেশি ভোট পেয়েছেন। সর্বশেষ গণনা অনুযায়ী হিলারি ক্লিনটন পেয়েছেন মোট ৬ কোটি ৩৬ লাখ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ট্রাম্প পেয়েছেন ৬ কোটি ১৯ লাখ ভোট। এর অর্থ হলো প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বাদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হিলারির চেয়ে বেশি ভোট পাননি অন্য কোনো প্রার্থী। কুক পলিটিক্যাল রিপোর্ট অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত যত ভোট গণনা করা হয়েছে তার মধ্যে হিলারি পেয়েছেন শতকরা ৪৮ ভাগ ভোট। ট্রাম্প পেয়েছেন শতকরা ৪৬.৭ ভাগ ভোট। কিন্তু এত ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে থাকলেও হিলারি শেষ হাসিটি হাসতে পারেননি। তাকে বরং ৯ই নভেম্বর বাধ্য হয়ে পরাজয় মেনে নিতে হয়েছে। কারণ, এখন যুক্তরাষ্ট্রে যে ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট ব্যবস্থা আছে তাতে কোনো একটি রাজ্যে যে প্রার্থী সবচেয়ে বেশি ভোট পাবেন সে রাজ্যের সবগুলো ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট পাবেন তিনি। এ হিসাবে ডনাল্ড ট্রাম্পের সংগ্রহ ২৯০ ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট। হিলারির সংগ্রহ ২৩২। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে হলে প্রয়োজন হয় কমপক্ষে ২৭০টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট। এ লড়াইয়ে হিলারিকে পিছনে ফেলে দেন ট্রাম্প। ব্যাটলগ্রাউন্ড বা ‘যুদ্ধক্ষেত্র’ বলে পরিচিত রাজ্য ফ্লোরিডা, ওহাইও ও নর্থ ক্যারোলাইনায় রিপাবলিকান প্রার্থী জয়ী হন। এছাড়া অপ্রত্যাশিতভাবে পেনসিলভানিয়া ও উইসকনসিনে বিজয়ী হন ট্রাম্প। এ দুটি রাজ্য ডেমোক্রেটদের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত। এসব রাজ্যে ট্রাম্প জয় পাওয়ায় তার হোয়াইট হাউসে প্রবেশের পথ কণ্টকমুক্ত হয়ে যায়। সর্বশেষ হিসাব মতে এবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গ্রিন পার্টির প্রার্থী জিল স্টেইন ও লিবারটারিয়ান পার্টির গ্যারি জনসন দু’জনে মিলে পান ৭০ লাখেরও বেশি ভোট। যদি এ ভোটগুলো হিলারি পেতেন তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিলারির হওয়ারই সম্ভাবনা প্রবল হয়ে উঠতো। নির্বাচনের দু’সপ্তাহের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। এখনও অনেক ভোট গণনা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় হিলারির চেয়ে ট্রাম্প কম ভোট পেয়েছেন এমন সমালোচনায় ক্ষুব্ধ ট্রাম্প। সমালোচকদের জবাবে তিনি বলেছেন, চাইলে পপুলার ভোটেও তিনি বিজয়ী হতেন। এক টুইটে তিনি বলেছেন, নির্বাচন যদি মোট পপুলার ভোটের ভিত্তিতে হতো তাহলে তাহলে আমি নিউ ইয়র্ক, ফ্লোরিডা ও ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রচারণা চালাতাম। এর ফলে সহজেই অনেক অনেক বেশি ভোট পেতাম। এর আগে তিনি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট ব্যবস্থার সমালোচনা করলেও এবার বলেছেন, ইলেক্টোরাল কলেজ ব্যবস্থা একদম জেনুইন একটি ব্যবস্থা। এটা প্রতিটি রাজ্যে রয়েছে। সেটা ছোট হোক বা বড় হোক। এক্ষেত্রে প্রচারণা চালানোটা অনেক কঠিন। তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারির চেয়ে কম পপুলার ভোট পাওয়ায় ৪৫ লাখেরও বেশি মানুষ একটি পিটিশনে স্বাক্ষর করেছেন। ওই পিটিশনে তারা ডেলিগেটদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তাতে প্রতিটি রাজ্যের ডেলিগেটদের হিলারির পক্ষে ভোট দেয়ার দাবি জানানো হয়েছে। এমন ঘটনা ইতিহাসে অনেকবার ঘটেছে। ফলে তাতে নির্বাচনের ফল পাল্টে যায়নি। এবারও সেটা হবার সম্ভাবনা নেই। ওই পিটিশনে বলা হয়েছে, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী অনেক বেশি পপুলার ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তাকেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বানানো উচিত। ট্রাম্প জিতেছেন শুধু ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটের কারণে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে যেকোনো প্রার্থীকে হোয়াইট হাউসের অনুমোদন দেয়ার অধিকার আছে ইলেক্টোরাল কলেজের। তাহলে কেন আমাদের গণতান্ত্রিক নির্বাচনী ফলের ক্ষেত্রে আমাদের দেশে সবচেয়ে অগণতান্ত্রিক পদ্ধতির ব্যবহার হচ্ছে?
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.