প্রথম ইনিংসে করা বাংলাদেশের ২২০ রান ছিল ইংল্যান্ডের ব্যাটিংয়ের কাছে মামুলি। কিন্তু মাত্র ১১৪ রানেই ইংলিশদের টপ ও মিডল অর্ডারের ৬ ব্যাটসম্যান বিদায় নেন। তাতে কি, চলতি আসরে বাংলাদেশ দলের বিপক্ষে যে দুর্বার তাদের লেজের ব্যাটসম্যানরা। দেখালেনও তাই, ৮ম উইকেটের পতনের সময় স্কোর বোর্ডে ১৪৪ রান। মুশফিকদের লিড নেয়ার সুযোগ। কিন্তু ৯ম উইকেটে ওকস ও আদিল রশিদ মিলে গড়লেন ৯৯ রানের জুটি। আদিল ৪৪ এ অপরাজিত থাকলেও ওকস আউট হলেন ৪৬ রানে। স্কোর বোর্ডে থামলো ২৪৪ রানে। উল্টো ২৪ রানের লিড। টেস্টে এই দু’জনের গড়া জুটিই এখন সেরা। এর আগে নিউজিল্যান্ডের সোদি ও ওটালিং জুটি করেছিলেন ৯৩ রান। চট্টগ্রাম টেস্টে রশিদ ও ব্রড ৯ম উইকেটে জুটি ছিল ৩১ রানের। ইংলিশদের সাত থেকে দশ, লেজের এই তিন ব্যাটসম্যানের আরও একটি জুটি ছিল চট্টগ্রাম টেস্টে। ৭ম উইকেটে ৪৩ রানের জুটিতে বেয়ারস্টোর সঙ্গী ছিলেন ওকস। দুই দলের শক্তির মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য কী? বলার অপেক্ষা রাখে না লেজের জোর। কারণ চট্টগ্রাম টেস্টেও লেজের ব্যাটিং অদক্ষতাই জিততে জিততেও ২২ রানে হেরে যায় বাংলাদেশ। ঢাকা টেস্টেতো এই নজির আরও ভয়াবহ। এক উইকেট হারিয়ে ১৭০ রান থেকে সবক’টি উইকেট হারিয়ে মাত্র ২২০ রানেই গুটিয়ে গিয়েছিল টাইগাররা। অথচ গতকালও ইংল্যান্ডের টপ অর্ডার ব্যর্থ হয়েছে কিন্তু লেজের জোরে বাংলাদেশের বিপক্ষে ঠিকই লিড নিয়ে নেয় অ্যালিস্টার কুকবাহিনী। নিশ্চয় রশিদ ও ওকসকে কুক ড্রেসিং রুমে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন। যেমনটা জানালেন প্রেস বক্সে বসে ইংল্যান্ডের সংবাদকর্মীরা। মেহেদী হাসান মিরাজ তাকে নিজের ৬ষ্ঠ শিকার না বানালে হয়তো তৃতীয় টেস্ট ফিফটিও হয়ে যেত। টেস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের শক্তি কোনটি! বলার অপেক্ষা রাখে না। অবশ্যই ব্যাটিং ও তাদের পেস বিভাগ। কিন্তু চলতি আসরে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং শক্তি কিছুটা হলেও আলোর মুখ দেখেনি। দুই টেস্টের কোনো ইনিংসে ইংলিশরা ৪শ’ রান করতে পারেনি। কারণ ব্যর্থ ছিল অ্যালিস্টার কুক, বেন ডাকেট, রুট ও ব্যালেন্সরা। অবশ্য মিডল অর্ডারে মঈন, বেন স্কোটস, বেয়ারস্টো, ট্রটরা লেজের সাহস দিয়েছেন। যেমন গতকাল তিন নম্বরে ব্যাট করতে নামা জো রুট ১২২ বল খেলে করেন ৫৬ রান। রুটের টেস্ট ক্যারিয়ারে এটি ২৩তম ফিফটি। এই সময় রুট ছ’টি জুটি গড়েছেন। তাতে বেয়ারস্টোর সঙ্গে ৪৫ রানই ছিল সর্বোচ্চ। প্রথমদিন বিকালে ৪২ রানে তিন উইকেট হারানো ইংল্যান্ডকে টেনে নিয়ে গেছেন ওয়ানডে দলের অধিনায়ক একাই। মূলত তার গড়ে দেয়া ভিতের উপর দাঁড়িয়েই লড়েছেন রশিদ ও ওকস। পেস বোলার ওকস যার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আছে ৯টি সেঞ্চুরি ১৯টি ফিফটি। এছাড়াও রশিদের আন্তর্জাতিক টেস্টে একটি ফিফটি থাকলে প্রথম শ্রেণিতে ১০টি সেঞ্চুরির পাশাপাশি আছে ৩৫টি ফিফটি। মূলত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে এটিই বড় শিক্ষা হওয়া উচিত। কারণ বাংলাদেশের লেজের ব্যাটসম্যানদের কারও প্রথম শ্রেণিতে একটিও সেঞ্চুরিও নেই। ১৬৩ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ইংল্যান্ড মধ্যাহ্ন বিরতিতে গিয়েছিল ৫২ ওভারের সময়। সেখান থেকে ফিরে ৩১ ওভার ব্যাট করে মাত্র ২ উইকেট হারিয়েও স্কোর বোর্ডে যোগ হয় ৮১ রান। মূলত ইংল্যান্ডের রানের চাকা অচল করে দিয়েছিলেন অফ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ। অভিষেক টেস্টে ৮০ রানে ছয় উইকেট নেয়ার পর গতকাল ইতিহাসে ঢুকে পড়েন ৮২ রানে ফের ৬ উইকেট নিয়ে। এছাড়াও তাইজুল তিনটি ও সাকিব নিয়েছেন একটি উইকেট। দলের একমাত্র পেসার কামরুল ইসলাম রাব্বী মাত্র ৩ ওভারই বল করেন। অন্যদিকে বাংলাদেশের বিপক্ষে লেজের জোর শুধু ইংল্যান্ডই নয়, দেখিয়েছে অন্য টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোও। এর মধ্যে ৭ম উইকেটে শত রানের জুটি গড়েছে ২ বার করে শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়ে। একবার ভারত। এর মধ্যে ২০০৭ সালে লঙ্কান জয়াবর্ধনে ও পেসার ভাস করেছিলেন সর্বোচ্চ অপরাজিত ২২৩ রান। এছাড়াও ৮ম উইকেটে শতরানের জুটি তিনটে। ৯ম উইকেটে কোন শত রানের জুটি না থাকলেও পঞ্চাশোর্ধ জুটি আছে ৯টি যার মধ্যে গতকাল ইংল্যান্ডের ৯৯-ই সর্বোচ্চ। এছড়াও দশম উইকেটে বাংলাদেশকে ভুগিয়েছে ভারত ও নিউজিল্যান্ডের দু’টি শতরানের জুটি। জহির খান ও শচীন টেন্ডুলকর ১২৩ রানের জুটি গড়েছিলেন ২০০৭ সালে। আর নিউজিল্যান্ডের বোল্ট ও ওয়াটলিং মিলে ১২৭ রানের জুটি গড়েছিলেন দশম উইকেটে ২০০৩ সালে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.