যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দুই প্রার্থীর প্রথম বিতর্ক শুরু হওয়ার আগেই তা বিতর্কিত ও ক্লেদাক্ত হয়ে পড়ল। রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর ব্যক্তিগত অতিথি হিসেবে সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সাবেক প্রেমিকা হিসেবে পরিচিত জেনিফার ফ্লাওয়ারকে এই বিতর্কে উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। জেনিফার জানিয়েছেন, তিনি সে আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। আরেক মার্কিন ধনকুবের মার্ক কুবানের উপস্থিতিকে চ্যালেঞ্জ করেই জেনিফারকে ট্রাম্প এই আমন্ত্রণ পাঠান। কুবান ট্রাম্পের কট্টর সমালোচক হিসেবে পরিচিত। ট্রাম্প যাতে তাঁকে দেখেই বিগড়ে যান, সেই উদ্দেশে কুবান এই বিতর্কে উপস্থিত থাকার কথা ঘোষণা করেছিলেন। আরকানসাস অঙ্গরাজ্যের গভর্নর থাকাকালীন বিল ক্লিনটন জেনিফার ফ্লাওয়ারের সঙ্গে গোপন প্রণয়ের কারণে বড় ধরনের কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন। ট্রাম্প এক টুইটার বার্তায় ঘোষণা করেছেন, তিনি জেনিফারকে ঠিক কুবানের পাশের আসনে বসানোর ব্যবস্থা নেবেন। হিলারি ক্লিনটনের নির্বাচনী প্রচারশিবির অবশ্য ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত খুব সদয়ভাবে নেয়নি। তাদের প্রধান মুখপাত্র বলেছেন, হিলারি এই বিতর্কে আমেরিকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এমন সব বিষয় নিয়ে আলোচনায় আগ্রহী। কিন্তু ট্রাম্প সে পথে না গিয়ে ভিন্ন পথ বেছে নিয়েছেন। বিতর্কের আয়োজক নির্দলীয় প্রেসিডেনশিয়াল ডিবেট কমিশনের অন্যতম সভাপতি ফ্রাঙ্ক ফারেনকফসি এনএনএর কাছে ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, বিতর্ক থেকে নজর সরিয়ে আনার যেকোনো চেষ্টাই হবে ভুল। কমিশনের কাছ থেকে টিকিট সংগ্রহ করে নিজের পছন্দমতো ব্যক্তিকে যদি সম্মুখসারির আসনে বসানো হয়, তাহলে সেটি হবে দুঃখজনক। একটি সুখবর নিয়ে নিউইয়র্কের হফস্ট্রা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এই বিতর্কে যাচ্ছেন ট্রাম্প। ওয়াশিংটন পোস্ট ও এবিসি টেলিভিশনের এক জাতীয় জনমত জরিপ অনুসারে, হিলারি ও ট্রাম্পের প্রতি সম্ভাব্য ভোটারদের সমর্থন কার্যত সমান সমান। জরিপ অনুসারে এই মুহূর্তে হিলারি ও ট্রাম্পের জনসমর্থন যথাক্রমে ৪৫ ও ৪৪ শতাংশ। হিলারি ক্লিনটনেরও একটি সুখবর রয়েছে। দেশের প্রধান দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমস অত্যন্ত জোরালো ভাষায় তাঁর প্রার্থিতা অনুমোদন করেছে। টাইমস-এর ভাষায়, এই জটিল সময়ের জন্য হিলারি হবেন সবচেয়ে অভিজ্ঞ ও পরীক্ষিত প্রার্থী। পাশাপাশি টাইমস বলেছে, ট্রাম্পকে নির্বাচিত করা হবে একটি ভুল ও বিপজ্জনক সিদ্ধান্ত। আরও একভাবে টাইমস ট্রাম্পের বিপক্ষে নিজের অবস্থানের কথা জানিয়েছে। তারা ট্রাম্প গত এক সপ্তাহে যেসব ‘ডাহা মিথ্যাচার’ করেছেন, তার সপ্রমাণ এক দীর্ঘ তালিকা প্রকাশ করেছে। টাইমস লিখেছে, সব রাজনৈতিক প্রার্থীই নিজের প্রয়োজনে সত্যকে বিকৃত করেন। কিন্তু ট্রাম্প একের পর এক যেভাবে সত্যের বিকৃতি করেন ও সরাসরি মিথ্যাচার করেন, আমেরিকার ইতিহাসে তা বিরল। পত্রিকাটি লিখেছে, মিথ্যাচার ট্রাম্পের চরিত্রের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে মিশে আছে। তিনি শুরু থেকেই ইরাক যুদ্ধের বিপক্ষে ছিলেন, ওবামা আমেরিকায় জন্মগ্রহণ করেননি, এই প্রচারণা তিনি নন, হিলারি শুরু করেছেন, অথবা কৃষ্ণকায় ও অন্য সংখ্যালঘুদের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা বাড়ছে—এই জাতীয় প্রতিটি কথাই মিথ্যা। টাইমস লিখেছে, শুধু রাজনীতিকদের ব্যাপারে নয়, তথ্যমাধ্যমের লোকদের ব্যাপারেও ট্রাম্প অনায়াসে মিথ্যা বলে যান। যেমন, তিনি দাবি করেছেন এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত প্রতিটি বিতর্কের সঞ্চালক ছিলেন ডেমোক্রেটিক পার্টির সমর্থক, কিন্তু টাইমস তথ্য-প্রমাণসহ দেখিয়েছে, কথাটা মিথ্যা। শুধু রক্ষণশীল টিভি চ্যানেল ফক্স-এর সঞ্চালক ক্রিস ওয়ালেস একমাত্র ডেমোক্র্যাট, বাকি সবাই হয় রিপাবলিকান অথবা নির্দলীয়। ভাবা হচ্ছে, এই বিতর্কে ট্রাম্পের বিভিন্ন মিথ্যাচার নিয়ে একাধিক প্রশ্ন থাকবে। বিতর্কের সঞ্চালক সে প্রশ্ন না তুললে হিলারি নিজ বক্তব্যের ভেতর সে তথ্য প্রকাশ করবেন বলে জানা গেছে। ৯০ মিনিট স্থায়ী এই বিতর্ক শুরু হবে স্থানীয় সময় আজ সোমবার রাত নয়টায় (বাংলাদেশ সময় কাল মঙ্গলবার সকাল সাতটা)। সিএনএনসহ প্রায় সব প্রধান মার্কিন টিভি নেটওয়ার্কে ও ইন্টারনেটে এই বিতর্ক সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। ভাবা হচ্ছে, দর্শকসংখ্যার দিক দিয়ে এটি হবে ইতিহাসে সর্ববৃহৎ।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.