বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন নিউজের রিপোর্টার ও ক্যামেরাম্যানের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা নিয়েছে পুলিশ। হত্যার উদ্দেশ্যে সাংবাদিকদের ওপর এই হামলা চালানো হয় বলে মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে। গতকাল এটিএন নিউজের উপ-ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মোশাররফ আলম সিদ্দিকী বাদী হয়ে এ মামলা করেন। এর আগে, তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ডাকা বৃহস্পতিবার রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে হরতালের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে পুলিশের হামলার শিকার হন রিপোর্টার কাজী ইহসান বিন দিদার ও ক্যামেরাম্যান আবদুল আলীম। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে শাহবাগ থানার এএসআই এরশাদ মণ্ডলকে সাময়িক বরখাস্ত এবং ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে পুলিশ। শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মামলর এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ডাকা আধাবেলার হরতালে ওই সংবাদকর্মী পেশাগত দায়িত্ব পালন করছিলেন রাজধানীর শাহবাগ থানার সামনের সড়কে। পৌনে ২টার দিকে এক ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে যাচ্ছিল কয়েক পুলিশ সদস্য। ওই সময় ক্যামেরাম্যান আবদুল আলীম সেই দৃশ্য তার সঙ্গে থাকা এটিএন নিউজের ক্যামেরায় ধারণ করছিলেন। এমন সময় আবদুল আলীম কিছু বুঝে ওঠার আগেই বেশ কয়েক পুলিশ সদস্য কোনো ধরনের উসকানি ছাড়াই অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। তারা আবদুল আলীমকে কিল, ঘুষি, চড়, থাপ্পড় ও রাইফেলের বাঁট দিয়ে বেদম আঘাত ও মারপিট শুরু করে। এমনকি ক্যামেরা কেড়ে নেয়ারও চেষ্টা চালানো হয়। ঘটনার আকস্মিকতায় আবদুল আলীম হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। আলীমকে মারধর করতে দেখে এ সময় স্টাফ রিপোর্টার কাজী ইহসান বিন দিদার তাকে উদ্ধারের জন্য এগিয়ে গেলে তাকেও কিল, ঘুষি, চড়, থাপ্পড় ও রাইফেলের বাঁট দিয়ে একের পর এক আক্রমণ করতে থাকে পুলিশ। একপর্যায়ে তাদের দু’জনকে কয়েকজন পুলিশ সদস্য মিলে লাথি মারতে মারতে, টেনেহিঁচড়ে শাহবাগ থানার অভ্যন্তরে নিয়ে যায়। ওই সময়েও তাদের মারধর ও আঘাত করে পুলিশ সদস্যরা। থানার অভ্যন্তরে আরো পুলিশ সদস্য যুক্ত হয়ে হত্যা চেষ্টার উদ্দেশ্যে আবদুল আলীম ও কাজী ইহসান বিন দিদারকে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আগ্নেয়াস্ত্র ও লাঠিসোটা দিয়ে বিভিন্নভাবে একের পর এক গুরুতর আঘাত ও মারধর করতে থাকে। ভাঙচুর করা হয় আবদুল আলীমের সঙ্গে থাকা এটিএন নিউজের ক্যামেরা। এ সময় কয়েকজন সহকর্মী দৌড়ে গিয়ে তাদের উদ্ধারের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা আক্রমণে থাকা পুলিশ সদস্যদের হেফাজত থেকে আবদুল আলীম ও কাজী ইহসান বিন দিদারকে উদ্ধার করেন। পুরো ঘটনার ভিডিও চিত্র ও স্থির চিত্র সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের ক্যামেরায় ধারণ করা হয়। মুহূর্তের মধ্যে খবর পেয়ে এটিএন নিউজের কয়েকজন সিনিয়র রিপোর্টার ও সিনিয়র ক্যামেরাপার্সন এবং অন্য সহকর্মীরা শাহবাগ থানায় ছুটে যান। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় গুরুতর আহত দু’জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। হাসপাতালে চিকিৎসকরা এই দুজনের শরীরে গুরুতর জখমের আলামত পান। তাদের সেখানে চিকিৎসা দেয়া হয়। এজাহারে পুরো ঘটনার বিবরণ দিয়ে আরো উল্লেখ করা হয়, পরে থানায় গিয়ে বিভিন্ন ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও চিত্র ও স্থিরচিত্র থেকে হামলাকারী কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে শনাক্ত করা হয়। এর মধ্যে শাহবাগ থানা পুলিশের এএসআই এরশাদ মণ্ডল, পুলিশ কনস্টেবল মোখলেছুর, পুলিশ কনস্টেবল হোসেন কবির ও পুলিশ কনস্টেবল সবুজ খানকে শনাক্ত করা যায়। এ ছাড়াও আরো অন্তত ১০ থেকে ১২ জন পুলিশ সদস্যকে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হয়। গুরুতর আহত এটিএন নিউজের ক্যামেরাপার্সন আবদুল আলীম ও স্টাফ রিপোর্টার কাজী ইহসান বিন দিদার জানিয়েছেন, হত্যার উদ্দেশ্যে পুলিশ সদস্যরা তাদের ওপর আঘাত করেছে। এ বিষয়ে এটিএন নিউজের অ্যাসোসিয়েট হেড অব নিউজ প্রভাষ আমিন বলেন, তদন্তকালীন একজন এএসআইকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। এটা কোনো শাস্তি না। যখন আমরা ঘটনাটি ভুলে যাব তখন সাসপেন্ড তুলে নেবে। অন্য কোথাও পোস্টিং দেয়া হবে। এরকম লোক দেখানো শাস্তি চাই না। আমরা প্রচলিত আইনে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.