রাজধানীর গুলশানে ডিএনসিসি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও পুনর্বাসনের দাবি করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা। এ জন্য তাঁরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের গাফিলতিরও অভিযোগ করেন তাঁরা। গতকাল বুধবার মার্কেটের সামনে অনুষ্ঠিত একাধিক বৈঠকে এসব দাবি করেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা। বৈঠকে পুনর্বাসন না হওয়া পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের অস্থায়ীভাবে কাঁচা মার্কেট ও সুপার মার্কেটের খোলা জায়গায় বসার সিদ্ধান্ত হয়। এ বিষয়ে কাঁচা মার্কেট ও সুপার মার্কেট ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান শের মুহাম্মদ সাংবাদিকদের বলেন, কাঁচা মার্কেট ও সুপার মার্কেটে চার শর মতো দোকান পুড়ে গেছে। কাঁচা মার্কেটের ভবন ধসে গেছে। এই অবস্থায় অস্থায়ীভাবে মার্কেটের খোলা জায়গা ও পার্কিংয়ের জায়গায় দোকান বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এদিকে পাকা মার্কেটের বেশ কয়েকজন দোকানমালিক বলেন, তাঁদের ভবনটি ধসে পড়েনি। তাই সেই জায়গা মেরামত করে ব্যবসা করার সুযোগ দিতে উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রতি দাবি জানান তাঁরা। দোকান মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ আখতারুজ্জামান বলেন, পাকা মার্কেটের ভবনটি সরকারি মালিকানাধীন। তাই সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের কাছে মার্কেটটি সংস্কার করে দেওয়ার দাবি করা হচ্ছে। গত সোমবার দিবাগত রাত আড়াইটায় গুলশান ১ নম্বরের ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) মার্কেটে আগুন লাগে। কাঁচা মার্কেট অংশটি ধসে পড়ে। ব্যবসায়ীদের তথ্য অনুযায়ী, খোলা জায়গাসহ ডিএনসিসি মার্কেটটির আয়তন প্রায় ১ লাখ ৮০০ বর্গফুট। পূর্ব ও পশ্চিম দিকে লম্বা মার্কেটটির পাশাপাশি দুটি ভবন রয়েছে। পশ্চিম দিকের দোতলা ভবনটি ‘পাকা মার্কেট’ নামে পরিচিত। এর নিচতলায় আসবাব এবং দ্বিতীয় তলায় পোশাক, জুতা, খেলাধুলার পণ্য বিক্রির খুচরা ও পাইকারি দোকান। পূর্বাংশে ‘কাঁচা ও সুপার মার্কেট’ নামের ভবনটি চারতলা। এর নিচতলায় কাঁচাবাজার এবং ওপরের তলাগুলোতে প্রসাধন ও খাদ্যসামগ্রীর পাইকারি দোকান। ধসে পড়া এই ভবনে ৪০০ দোকান ছিল। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত মার্কেটটি পরিদর্শন করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরসহ সরকার ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ ছাড়া ফায়ার সার্ভিসের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ও ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ মোশারফ হুসেনও গতকাল সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, পুড়ে যাওয়া দোকানগুলো থেকে আলামত সংগ্রহ করা হচ্ছে। সেগুলো পরীক্ষা করা হবে। ঘটনাটি অগ্নিকাণ্ড, নাকি নাশকতা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দুপুরেও মার্কেটের বিভিন্ন জায়গা থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে। ধোঁয়া থেকে আবার যেন আগুন ধরতে না পারে, সে জন্য ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কাজ করছিলেন। মার্কেটের দোতলায় ঢুকে দেখা গেল, ঘুটঘুটে আঁধার। টর্চলাইট জ্বালিয়েও কিছু দেখা যায় না। পুড়ে গেছে সব দোকানের শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র। মেঝেতে জমে আছে ছাই-পানি। ছড়িয়ে আছে বিদ্যুতের তার। গলে গেছে দোকানগুলোর কাচের দরজা। মেঝের টাইলস ভেঙে চুরমার। ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শক এমরান হোসেন বলেন, পানি ছিটানোর কারণে পুড়ে যাওয়া মালামাল জমাট বেঁধে গেছে। তাই অনেক জায়গায় পানি ঢুকছে না। যেসব জায়গা থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে, পানি দেওয়া হচ্ছে। আগুন জ্বলে ওঠার আশঙ্কা নেই। ডিএনসিসি পাকা মার্কেটের ব্যবসায়ীরা তাঁদের দোকান থেকে অক্ষত কিছু মালামাল সরিয়ে নিতে পারলেও কাঁচা মার্কেটের ব্যবসায়ীরা সেই সুযোগ পাননি। তবে তাঁরা মার্কেটেই ব্যবসা করতে চান। মাসুদ নামে কাঁচা মার্কেটের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমরা এখানেই থাকতে চাই। ব্যবসা করতে চাই। আমাদের তো সব শেষ। কিছুই নাই। এখন চোখের পানিও শুকিয়ে গেছে। কাঁদতেও পারছি না।’ মার্কেটের নিচতলায় লাবিব করপোরেশন নামের এক দোকানি ইয়াসির আরাফাত। তিনি বলেন, তাঁদের দোকানে বিদেশ থেকে আনা প্রায় ৪০ লাখ টাকার কোমল পানীয়, সস, কাজুবাদামসহ বিভিন্ন ধরনের খাদ্যসামগ্রী ছিল। এ ছাড়া বিভিন্ন ক্রেতার কাছে তাঁরা ২০ লাখ টাকা পাবেন। সেসব হিসাবের কাগজও দোকানে ছিল। মার্কেট ধসে পড়ায় তাঁরা দোকানে যেতে পারছেন না। মার্কেটের ভিআইপি জুয়েলারির মালিক শাহ আলম বলেন, ‘এখানে আমার তিন কোটি টাকার গয়না ছিল। সব পুড়ে গেছে। বিভিন্ন ক্রেতাকে ডেলিভারি দেওয়ার কথা। এখন বিয়ের মৌসুম। এখন আমরা ডেলিভারিও দিতে পারছি না।’ রজনীগন্ধা স্টোর নামের সাইকেলের দোকানমালিক আখতার। তিনি বলেন, তাঁর দোকানে বিভিন্ন ধরনের ১৩ লাখ টাকার সাইকেল ছিল। এখন বেচাকেনা ভালো ছিল। কিন্তু আগুনে সব শেষ হয়ে গেল। বিভিন্ন দোকানির ভাষ্য, আগুনে তাঁদের ট্রেড লাইসেন্স, দোকানের বরাদ্দপত্র, কিছু টাকা, ক্রেতাদের কাছে বাকিতে পণ্য বিক্রির কাগজপত্র—সব পুড়ে গেছে।