বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মুখে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভয়াবহ ও অমানবিক নির্যাতনের কথা শুনলেন বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী। গতকাল মঙ্গলবার কুতুপালংস্থ রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত প্রায় ৩ ঘণ্টা অবস্থান করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী ও ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো এলপি মারসুদি শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন এনজিও সংস্থার কার্যত্রুম, সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকসহ নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের খবরাখবর নেন। এ সময় দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রায় ১ ঘণ্টা রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে ঘুরে মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর নির্যাতনের একাধিক কাহিনী শুনেন। এ সময় তাদের সঙ্গে আরো ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হক, কক্সবাজার জেলা প্রসাশক মো. আলী হোসেনসহ দু’দেশের উচ্চপর্যায়ের কর্মকার্তাবৃন্দ। উল্লেখ্য, গত ৯ই অক্টোবর বাংলাদেশ সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে বর্ডারগার্ড পুলিশ (বিজিপি’র) দুইটি বিওপি ও কাউয়ার বিল সদর ব্যাটলিয়নে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। এতে ৯ জন সরকারি নিরাপত্তা কর্মী, ২ জন আক্রমণকারী নিহত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ সময় ধরে চলা সামরিক অভিযানের মাধ্যমে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নৃ-গোষ্ঠী নির্মূল করা হচ্ছে, ঘটানো হচ্ছে মানবতাবিরোধী অপরাধ। ১৭টি রোহিঙ্গা অধ্যুষিত পাড়া গ্রামে পরিচালিত অভিযানে প্রায় ৪০ হাজারের মতো রোহিঙ্গা গৃহহীন, দেড় হাজারের ঘরবাড়ি, স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ করে ধ্বংস করা হয়েছে, শতাধিক নিরীহ রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে, অসংখ্য কিশোরী-যুবতীদের ধর্ষণ করা, আইন বহির্ভূতভাবে নির্বিচারে গণগ্রেপ্তার চালানো, মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে কিছু কিছু আটককৃতদের ছেড়ে দেয়াসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে দেশি-বিদেশি সংবাদ গণমাধ্যমে। এসবের প্রেক্ষিতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘটিত সেনা নির্যাতন ও কোন ত্রাণ সহযোগিতা ও কর্মীদের অনুমতি না দেয়া, মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন বলে অবহিত করে কঠোর সমালোচনা করেছেন। বাংলাদেশে অবস্থান নেয়া রোহিঙ্গাদের অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইতিপূর্বে মিয়ানমারে আশিয়ান জোটভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের রোহিঙ্গা সংক্রান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.