তাজ মহল প্রেমের প্রতীক নিশ্চয়ই! নিঃসন্দেহে পূর্ণতা না পাওয়া প্রেমেরও! ঠিক এই জায়গায় এসে একটা প্রশ্ন বিব্রত করতে পারে। ১৪টি সন্তানের জন্ম দেওয়ার পরেও কি প্রেম বেঁচে থাকে দম্পতির মধ্যে? বেঁচে থাকলেও সেই প্রেম অপূর্ণই থেকে যায়?
মমতাজ মহল আর শাহজাহানের দাম্পত্য কিন্তু বলছে অন্য কথাই! বলছে, তাদের প্রেম আর যাই হোক, পূর্ণতা পায়নি। সেই জন্যই রাত নামলে তাজমহলে আজও জেগে ওঠে তাদের অতৃপ্ত আত্মা।
অনেকে কথাটা শুনলে বিরক্ত হতে পারেন। ভারতের যে সব ঐতিহাসিক জায়গার ভুতুড়ে বলে কুখ্যাতি রয়েছে, তাদের মধ্যে তাজমহল পড়ে না! তাহলে এই রটনার জন্ম কি নেহাতই মুঘল দম্পতির মরদেহ সৌধে শায়িত রয়েছে বলেই?
বলা মুশকিল! এও হতে পারে যে,
মানুষ চোখধাঁধানো প্রেমে বিচ্ছেদ দেখতে পছন্দ করে না। সেই জন্যই হয়তো এমন রটনা!
তবে, এ কথা ঠিক, সাধারণ মানুষ যেমন মমতাজ মহলের অকাল প্রয়াণ এবং তার ফলে দম্পতির বিচ্ছেদ মেনে নিতে পারেনি, ঠিক তেমন দশাই হয়েছিল শাহজাহানেরও! যত দিন তিনি ময়ূর সিংহাসনে আসীন ছিলেন, তখনও। আবার ছেলে ঔরঙ্গজেবের হাতে গৃহবন্দী হয়েও মৃত্যুশয্যায় তিনি তাকিয়ে থাকতেন তাজ মহলের দিকে।
লোককাহিনি বলছে, সেই অতৃপ্তিই আজও তাদের ফিরিয়ে আনে তাজ মহলে। কবরে নয়, তার বাইরে সূক্ষ্ম শরীরে।
প্রচলিত বিশ্বাস, অমাবস্যার রাতে আজও কবর থেকে উঠে আসেন মুঘল দম্পতি। মিলিত হন তাজ মহলে। যাতে তাদের কেউ দেখতে না পায়, সেই জন্যই তারা বেছে নেন গহন অন্ধকার রাতের নিভৃতি।
আবার এও শোনা যায়, আলাদা আলাদা ভাবেও তাজমহলে ঘুরে বেড়ান মমতাজ আর শাহজাহান। রাতে যদি কোনও নারী একেবারে একা তাজ মহলে উপস্থিত হন, তবে তিনি শাহজাহানের দেখা পাবেনই! মমতাজ মহল ভেবে ভুল করে শাহজাহান কথা বলতে আসবেন তার সঙ্গে।
বিপরীতে, একা পুরুষ দেখলেও কথা বলতে আসেন মমতাজ! ভুল ভেঙে গেলে আবার কবরে ফিরেও যান তারা! কারও কোনও ক্ষতি করেন না!
আবার প্রশ্ন উঠতে পারে- এ সব রটনা না ঘটনা? ভেবে দেখলে, মমতাজ আর শাহজাহানের এই প্রেমের ব্যাপারটাও কিন্তু রটনাই! হতেই তো পারে, তাজ মহল আসলে ভারতের বাদশাহর অহং আর সম্পত্তির সৌধ, প্রেমের নয়!
সেই প্রেম যখন মেনেই নিয়েছি আমরা, তখন মৃত্যুর পরেও তার সিলসিলার কথাটা মেনে নিতে অসুবিধা কোথায়?
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.