শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের আওতাধীন রেলপথের উভয়পার্শ্বে ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে ছোট-বড় অর্ধশতাধিক লেভেল অধিক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যার মধ্যে ১৭টি ক্রসিং অনুমোদিত, বাকি ক্রসিংগুলোর রেলওয়ের কোনো অনুমোদন নেই। বিভিন্ন স্থানে রেল লাইনের ওপর দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে সড়কপথ। উল্লিখিত লেভেল ক্রসিংগুলোর অধিকাংশই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ফলে দুর্ঘটনা বাড়ছে। নিহত ও আহতদের তালিকা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বিশেষ করে হবিগঞ্জ অংশে নির্মাণ কাজে অনিয়ম, ত্রুটি এবং অলিপুর ও লস্করপুর রেল ক্রসিংয়ের ফ্লাইওভার নির্মাণ না করায় স্বাভাবিক যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। মহাসড়কের অলিপুর ও লস্করপুর রেলক্রসিং এলাকায় গত ৫ বছরে কমপক্ষে ২০০ দুর্ঘটনায় ১৪০-১৫০ জনের প্রাণহানি এবং শতাধিক লোক আহত হওয়ায় জনসাধারণ ওই দুই এলাকাকে মৃত্যুফাঁদ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। শাহজীবাজার রেলস্টেশনের উত্তর দিকে পাহাড়ের কিছু অংশ কেটে মহাসড়ক নির্মাণ করা হয়। ওই এলাকায় মহাসড়ক আরো সোজা করে নির্মাণের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তাতে বিপজ্জনকভাবে বাক সৃষ্টি করে নির্মাণ করায় প্রায়ই দুর্ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে। এছাড়া প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরবর্তী লস্করপুর রেল ক্রসিংয়ের বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা সংঘটিত হওয়ায় জনমনে শঙ্কা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ লেভেল ক্রসিংয়ের দুর্ঘটনা রোধে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। জানা যায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঢাকা-ভৈরব অংশ ৫২ ফুট প্রশস্ত করে নির্মাণ করা হলেও হবিগঞ্জ জেলার জগদীশপুর থেকে সিলেট পর্যন্ত অংশে তা সঙ্কুচিত করে ৪০ ফুট প্রশস্ত করে নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে দ্রুতবেগে যাতায়াতকারী যানবাহনগুলোর মখোমুখি সংঘর্ষের আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। মহাসড়কের হবিগঞ্জ অংশে লস্করপুর থেকে অলিপুর এর দূরত্ব প্রায় ৮ কিলোমিটার। প্রাথমিক পর্যায়ে উভয় স্থানের রেলক্রসিংয়ে দুটি ফ্লাইওভার নির্মাণের কথা থাকলে পরবর্তীতে তা বাস্তবায়িত হয়নি। অথচ মহাসড়কের নরসিংদী এবং ভৈরবে রেলক্রসিং যথারীতি দুটি ফ্লাইওভার নির্মাণ করায় সেখানে দুর্ঘটনার আশঙ্কা অনেকটা কম। এছাড়া মহাসড়কের হবিগঞ্জ জেলা অংশে বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় হাট-বাজার এবং গ্রামগুলোর সাথে বিদ্যমান সংযোগ সড়ক উন্নয়ন, নির্মাণ, পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণসহ আনুষঙ্গিক বিভিন্ন কাজ না করায় জনদুর্ভোগ ও দুর্ঘটনার হার মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। মুকুন্দপুর থেকে সাটিয়াজুরী রেলস্টেশনে অনুমোদিত ১৭টি লেভের ক্রসিংয়ের মধ্যে রয়েছে হরষপুর, মনতলা, শাহপুর, ইটাখলা নোয়াপাড়া, ছাতিয়ান, শাহপুর(২), শাহজীবাজার গ্যাসফিল্ড, শাহজীবাজার মাজার গেট, বিদ্যুৎ পাওয়ার স্টেশন গেট, নছরতপুর, তেলিয়াপাড়া, অলিপুর, শায়েস্তাগঞ্জ জংশন, শায়েস্তাগঞ্জ দাউদনগর বাজার, শায়েস্তাগঞ্জ পুরানবাজার, লস্করপুর। এছাড়া নাম না জানা অসংখ্য লেভেল ক্রসিং অনুমোদিত রয়েছে। অনুমোদিত লেভেল ক্রসিংগুলোতে রয়েছে নানাবিধ সমস্যা। গেট থাকলেও লোক নেই, কোনো কোনো স্থানে গেটম্যান থাকলেও গেইট নেই। নেই পার্শ্ববর্তী স্টেশনের সঙ্গে টেলিফোন যোগাযোগ ব্যবস্থা। গেটে বিদ্যুতের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় রাতের আঁধারে দুর্ঘটনা ঘটছে। গেটসম্যানের কর্তব্য কাজে অবহেলায় ও ট্রেনের সঙ্গে সড়কপথের যানবাহনের দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। অনুমোদিত ১৭টির মধ্যে মাত্র ৭টি স্থানের লেভেল ক্রসিংয়ে গেটসম্যান রয়েছে। অন্য লেভেল ক্রসিংগুলোতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ শুধু সাইনবোর্ড টাঙিয়ে গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন। তাতে লেখা আছে, ‘গেটম্যান নেই, নিজ দায়িত্বে লেভেল ক্রসিং পারাপার করুন’। আর যেসব লেভেল ক্রসিংয়ের অনুমোদন নেই সেগুলো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। অননুমোদিত লেভেল ক্রসিং দিয়ে প্রতিদিন যানবাহন ও পথচারীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লেভেল পার হচ্ছেন। উল্লিখিত অনুমোদিত ও অননুমোদিত লেভেল ক্রসিংয়ে গত ৫ বছরে কমপক্ষে ১৫০ এর অধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। প্রাণ হারিয়েছে প্রায় শতাধিক। বিশেষ করে ঢাকা-সিলেট রেলপথের শায়েস্তাগঞ্জ অলিপুর, নছরতপুর, লস্করপুর লেভের ক্রসিং মৃত্যুফাঁদে পরিনত হয়েছে। উল্লিখিত অলিপুর-লস্করপুর মহাসড়ক নির্মাণের সঙ্গে সঙ্গে ফ্লাইওভারের নির্মাণের কথাও ছিল। অজ্ঞাত কারণে ফ্লাইওভার না হওয়ায় সড়ক দুর্ঘটনা মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এদিকে সরজমিনে লেভেল ক্রসিংগুলো ঘুরে দেখা গেছে, গেটম্যানের দায়িত্বে অবহেলা, গেট নষ্ট হয়ে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে যাওয়ায়, স্টেশনের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায়, সড়কপথের যানবাহন চালকদের অতি চালাকির কারণে দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এ ব্যাপারে সড়কপথের যানবাহন চালকদের অভিযোগ, গেটগুলোতে বিদ্যুতের কোনো ব্যবস্থা নেই। তাতে শীত মৌসুমে প্রচণ্ড ঘণ কুয়াশার কারণে রাতের অন্ধকারে গেট উঠানো-নামানো দেখা যায় না। ফলে দুর্ঘটনার শিকার হতে হয় প্রতিনিয়ত। এ ব্যাপারে শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে জংশনের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (পথ) রুহুল আমিন খান এ প্রতিনিধিকে জানান, অনুমোদিত ১৭টির মধ্যে ৭টিতে গেট ও গেটম্যান আছে। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ আরো পাঁচ/ছয়টি স্থানের গেটম্যানের জন্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আরো আগে অবহিত করা হয়েছে।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ঝুঁকিপূর্ণ লস্করপুর লেভেল ক্রসিং
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.